ফ্যাটি লিভার কমাতে হাভার্ড বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: এই তিনটি সহজ পানীয়েই মিলবে অবিশ্বাস্য ফল

ডেস্ক: আধুনিক জীবনধারা, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার অভ্যাসের কারণে নীরবে বেড়ে চলেছে ফ্যাটি লিভার রোগের প্রকোপ। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন। যদিও ওষুধ কিছু ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে, তবু প্রতিদিনের কিছু সাধারণ জীবনযাপন অভ্যাসই এই রোগ প্রতিরোধে আশ্চর্যজনকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

হাভার্ড ও স্ট্যানফোর্ড–প্রশিক্ষিত গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট ড. সৌরভ সেঠি সম্প্রতি ফ্যাটি লিভার আক্রান্তদের জন্য তিনটি কার্যকর পানীয়ের পরামর্শ দিয়েছেন, যেগুলোর ওপর তিনি নিজেই আস্থা রাখেন। তাঁর মতে, নিয়মিত সক্রিয় জীবনযাপনের সঙ্গে এই পানীয়গুলো পরিমিত পরিমাণে সেবন করলে লিভারের এনজাইম কার্যকারিতা বাড়ে, প্রদাহ কমে এবং চর্বি জমার প্রবণতা হ্রাস পায়।

বিটের রস: লিভার সুরক্ষার প্রাকৃতিক শক্তি

ড. সেঠি প্রথমেই পরামর্শ দেন বিটের রস খাওয়ার। বিটে থাকে ‘বেটালাইনস’ নামের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ, যা শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেসই লিভার কোষের ক্ষতির অন্যতম কারণ, বিশেষ করে ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বিটের রস লিভার কোষকে রক্ষা করতে এবং চর্বি জমা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে ড. সেঠি সতর্ক করে বলেন, বিটের রস প্রাকৃতিকভাবে চিনি সমৃদ্ধ, তাই অতিরিক্ত সেবন উল্টো ক্ষতি করতে পারে। এতে লিভারে চর্বি জমার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তিনি পরামর্শ দেন, প্রতিদিন অল্প এক গ্লাস তাজা বিটের রস পান করাই যথেষ্ট; চাইলে এতে সামান্য পানি মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে, যাতে চিনি গ্রহণ নিয়ন্ত্রিত থাকে।

গ্রিন টি: ক্যাটেচিনে ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পানীয়

ড. সেঠির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গ্রিন টি, যা দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্যসচেতনদের প্রিয় পানীয়। গ্রিন টিতে থাকে ক্যাটেচিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার মধ্যে ‘ইপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট’ (EGCG) সবচেয়ে কার্যকর উপাদান হিসেবে পরিচিত।

তিনি বলেন, প্রতিদিন ২–৩ কাপ গ্রিন টি গরম বা ঠান্ডা যেভাবেই পান করা হোক না কেন, তা লিভারের জন্য উপকারী। তবে এতে চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টি যোগ না করাই ভালো, কারণ তা লিভার সুরক্ষার ক্ষমতা হ্রাস করে। সামান্য মিষ্টতার প্রয়োজন হলে প্রাকৃতিক বিকল্প হিসেবে মধু, মনক ফ্রুট বা স্টেভিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে।

কফি: সকালবেলার উদ্দীপনার বাইরেও লিভারের রক্ষাকবচ

লিভার স্বাস্থ্যের আলোচনায় কফি প্রায়শই উপেক্ষিত থেকে যায়। কিন্তু ড. সেঠির মতে, বাস্তবে এটি সম্পূর্ণ উল্টো। তিনি বলেন, কফি নিয়মিত সেবনে ফ্যাটি লিভার ও লিভার ফাইব্রোসিসের ঝুঁকি কমে। কফিতে থাকা বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ যেমন ক্যাফেইন ও পলিফেনল শরীরের প্রদাহ কমায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে।

তাঁর পরামর্শ, কফির সর্বোচ্চ সুফল পেতে চিনি বা ক্রিম ছাড়া অর্গানিক ব্ল্যাক কফি বা নিরাপদ বিকল্প দিয়ে হালকা মিষ্টি কফি বেছে নেওয়া উচিত। যাঁরা ক্যাফেইনের প্রতি সংবেদনশীল, তাঁরাও দিনে এক থেকে দুই কাপ কফি সেবনে লিভার সুরক্ষার উপকার পেতে পারেন।

বাস্তব জীবনে প্রয়োগের কৌশল

বিটের রস, গ্রিন টি ও কফি—এই তিনটি পানীয় লিভারের জন্য পরস্পর পরিপূরক সুফল দেয়। বিটের রস প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে চর্বি জমা কমায়, গ্রিন টি লিভারের এনজাইম কার্যকারিতা বাড়ায়, আর কফি লিভারের প্রদাহ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে ড. সেঠির মতে, এগুলোর কার্যকারিতা তখনই সবচেয়ে বেশি, যখন তা নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

তিনি আরও সতর্ক করেন, “অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। এমনকি স্বাস্থ্যকর পানীয়ও পরিমিতভাবে গ্রহণ করা উচিত, বিশেষ করে যেগুলো প্রাকৃতিকভাবে চিনি সমৃদ্ধ, যেমন বিটের রস।”

সবশেষে বলা যায়, ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে প্রতিদিনের অভ্যাসই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সচেতন খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, ব্যায়াম ও এই তিনটি স্বাস্থ্যকর পানীয় লিভারকে রাখতে পারে দীর্ঘদিন তরুণ ও কর্মক্ষম।